শিশু জন্ম গ্রহণের পর পরই যদি প্রতিবন্ধিতা শনাক্ত করা যায় তবে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিবন্ধিতা হ্রাস করা সম্ভব অথবা মারাত্মক প্রতিবন্ধিতা থেকে শিশুকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। অতি শৈশবে শিশুর হাঁটা, চলা, বসা, কথাবলা ইত্যাদি বিষয়গুলো যদি যথাযথভাবে না হয় তবে বুঝতে হবে শিশুর মধ্যে প্রতিবন্ধিতার আশঙ্কা আছে। আবার শিশু যদি কোনো কিছু বুঝতে অসুবিধা বোধ করে, অমনোযোগী হয়, অবাঞ্চিত আচরণ করে তাহলেও প্রতিবন্ধিতার আশঙ্কা থাকতে পারে। বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে ।
শারীরিক প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ – বেশির ভাগ শারীরিক প্রতিবন্ধিতা শিশু জন্মের পর চোখে দেখেই বোঝা যায়। আবার কিছু শারীরিক প্রতিবন্ধিতা শিশুর বেড়ে উঠার সাথে সাথে প্ৰকাশ পায় ।
ঠোঁট কাটা – উপরের ঠোঁট ঠিকমতো গঠিত হয় না। ঠোঁটে ফাঁকা থাকে। ফলে শিশুর খাদ্য গ্রহণে ও কথা বলতে সমস্যা হয় ।
কাটা তালু – মুখের ভিতরের উপরের দিকে তালুর হাড় ও মাংসপেশি ঠিকমতো গঠিত হয় না। ফলে খাদ্য গ্রহণ, কথা বলা এবং শোনার ক্ষেত্রেও সমস্যা হয় ।
মুগুর পা – একটি বা উভয় পা ভিতর বা পিছন দিকে বাঁকানো থাকে।
স্পাইনা বিফিটা – মেরুদণ্ডের হাড় (কশেরুকা) ঠিকমতো জোড়া লাগে না। ফলে মেরুরজ্জু পিঠের দিকে থলির মতো ফুলে উঠে। হাঁটাচলায় সমস্যা হয়।
সেরেব্রাল পলসি – জন্মের সময় শিশুকে অনেক সময় শিথিল বা নেতানো মনে হয়। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে অন্য শিশুদের মতো হাত-পা নাড়াচাড়া করতে পারে না। মাথা তোলা, বসা ইত্যাদি খুব ধীরগতিতে হয়। দুধ চুষতে ও গিলতে অসুবিধা হয়।
শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের অনুপস্থিতি বা গঠন বিকৃতি– শিশু শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের অনুপস্থিতি বা অসম্পূর্ণতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। অর্থাৎ হাত-পা, আঙ্গুল থাকে না বা গঠন অসম্পূর্ণ থাকে। দেহের গঠনও বিকৃত হতে পারে।
বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ – বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা হচ্ছে এক ধরনের অক্ষমতা এবং এই অক্ষমতাটি স্থায়ী প্রকৃতির। বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতার কোনো চিকিৎসা নেই। তবে যত্ন ও শিক্ষণের মাধ্যমে অনেক শিশুর আচরণের উন্নয়ন ঘটানো যায়। তাই আমাদের উচিত দ্রুত শনাক্ত করে শিশুর যথাযথ যত্ন ও শিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং শিশুর প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করা। তবে সব বুদ্ধি প্রতিবন্ধীরা একই ধরনের নয়।
নিম্নলিখিত কয়েকটি বৈশিষ্ট্য দেখে সাধারণভাবে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু শনাক্ত করা যায় ৷
বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত কিছু রোগ যা দেখে বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা সহজে শনাক্ত করা যায় ৷
মাইক্রোসেফালি – মাথার আকৃতি অস্বাভাবিক ছোট হয়। এরা গুরুতর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয় ।
হাইড্রোসেফালি – মাথার ভেতরে তরল পদার্থ জমে থাকে ফলে মাথার আকৃতি অস্বাভাবিক বড় হয়। এরাও গুরুতর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয় ।
ডাউন সিন্ড্রোম – গোলাকার মুখোমণ্ডল, তীর্যক চোখ, চোখের পাতা পুরু হয়। জন্মের সময় শিশু দুর্বল ও শিথিল থাকে। হাত, পা ও ঘাড় খাটো হয়। উপুড় হতে, বসতে ও হাঁটতে দেরি হয় এবং এরা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়।
ক্রিটিনিজম – শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বিলম্ব হয়। শিশুর দেহে থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন কম হয়। ফলে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় - শিশু খুব ধীরে বেড়ে উঠে। কপাল ছোট, মুখমণ্ডল ও হাত-পা ফোলা এবং বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা থাকে।
কাজ : প্রতিবন্ধিতা দ্রুত শনাক্তকরণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে লেখ ।
আরও দেখুন...